৩৩১ বছরে পদার্পন করলো বুদবুদের সোঁয়াই গ্রামের মুখার্জি বাড়ির দুর্গাপুজো,প্রথা মেনে আজও হয় মোষ বলি

হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন।তার পরেই শুরু বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো।তাই বুদবুদের সোঁয়াই গ্রামের মুখার্জি বাড়ির সদস্যদের নিঃস্বাস ফেলার সময় নেই।
৩৩১ বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন পরিবারের সদস্য বাসুদেব মুখার্জি। শোনা যায় এই গ্রামেই ছিল টোল অর্থাৎ পাঠশালা। আর এই টোলেই শিক্ষা গ্রহণে আসেন মুখার্জি বাড়ির পূর্ব পুরুষ বাসুদেব মুখার্জি। এই গ্রামেই পড়াশোনার সঙ্গে এই গ্রামেই তার বিয়ে হয়। পরে এই গ্রামেই বসবাস শুরু করেন তিনি। বাসুদেব মুখার্জির আদিবাড়ি পূর্ব বর্ধমানের বাকলসার গ্রামে। সেখানে তার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। তিনি যখন সোঁয়াই গ্রামে বসবাস শুরু করেন তখন বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে দেবীকে নিয়ে আসেন সোঁয়াই গ্রামে। কিন্তু দেবীকে সোঁয়াই গ্রামে আনার সময় ঘটে বিপত্তি। দেবীকে যখন কাঁধে করে আনা হচ্ছিল সেই সময় তৎকালীন বর্ধমানের রাজা তার সৈন্যদের নিয়ে ভ্রমণে বের হন। রাস্তায় মুখোমুখি হয় রাজার সৈন্য ও দেবীর। একদিকে সৈন্যরা বলেন, তারা রাস্তা ছাড়বে না অপর দিকে যারা দেবীকে কাঁধে করে নিয়ে আসছিলেন তারাও জেদ ধোরে বসেন দেবীকে নিয়ে কোনওভাবেই তারাও রাস্তা ছাড়তে বাধ্য নয়। অগত্যা রাস্তায় আটকা পরে রাজা নিজেই তাঁর কারণ খুঁজতে এগিয়ে আসেন। রাস্তায় আটকা পড়ার কারণ শুনে রাজা নিজেই দেবীকে প্রণাম করে নিজেই রাস্তা ছেড়ে দেন। পরে তিনি দেবীর জন্য বেশ কিছু জমিও দান করেন। তারপর থেকেই সোঁয়াই গ্রামেই মহা ধুমধামে পুজো হয়ে আসছে ৩৩১ বছর ধরে দেবী দুর্গার। এখানে শাক্ত মতেই পুজো হয়। ষষ্ঠীর দিন
সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পুজো। সপ্তমীর দিন বেলি বরণ, দোলা আনা, ছাগ বলি থেকে কুমারী পূজা সব নিয়ম প্রথা মেনেই পুজো হয়ে আসছে আজও। সপ্তমীর দিন ছাগ বলি হলেও অষ্টমীর দিনে এক রঙের ছাগ বলি হয় এখানে। নবমীর দিনে মোষ বলি প্রথা চালু আছে প্রথম দিন থেকেই। সঙ্গে ভেড়া বলি। এছাড়াও আখ,চালকুমরো ছাড়াও বিভিন্ন জিনিস বলি হয়।
পুজোর দিনে ভোগ নৈবিদ্য দেওয়া হয় রোজ। পুজোর চারটে দিন বাড়িতে মহিলাদের রান্না বান্নার কাজ থাকে না তাই তারাও এই চারটে দিন পুজোতে মেতে ওঠেন আনন্দে। পুজোর চারটে দিন নর-নারায়ণ সেবার আয়োজন থাকে প্রতি বছরের মতো। পুজোর সব থেকে বড় আকর্ষণ হল এখানকার মোষ বলি। নবমীর দিন আশেপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ বলি দেখতে ভিড় জমান মন্দিরে। শোনা যায় আগে দুটি করে মোষ বলি হত। একবার পুজোর সময় নবমীর আগের দিন একটি মোষের গলায় দড়ির ফাঁস লেগে মৃত্যু হয় সেই থেকেই দুটির বদলে একটি মোষ বলির প্রথা চলে আসছে। তবে, পরিবার সূত্রে জানা যায় মোষ বলি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয় ইংরেজরা। তারা সেই সময় তৎকালীন জেলাশাসককে দিয়ে বলি প্রথা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু, হঠাৎই পুজোর সময় জেলাশাসক নিজে এসে পুনরায় বলি চালু করতে বলে যান। কারণস্বরূপ তৎকালীন জেলাশাসক তাদের জানান, রাতে তার ঘুম হচ্ছে না, সবসময় নানান দুঃস্বপ্ন দেখছেন তিনি। তাঁর মনে হচ্ছে কেউ ত্রিশূল নিয়ে তাকে মারতে আসছে। এক প্রকার অসুস্থ হয়েই পড়েছিলেন তিনি।তাই বলি প্রথা বন্ধ করা যাবে না। মুখার্জি বাড়ির সদস্যরা বলেন, পুজোর কয়েকটা দিন যে যেখানেই থাকুক, সবাই এসে হাজির হয় পুজোতে। পুজোর সময় বাড়ির মহিলারা কোথাও বের হন না অন্য ঠাকুর দেখতে।বাড়ির সদর দরজার উপরে একসময় নহবত বসত।তবে এখন সেখানে ফাঁকাই থাকে। গোটা পরিবার মিলে আনন্দে কাটান পুজোর চারটে দিন। পুজোকে ঘিরে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আশেপাশের গ্রামের মানুষরাও ভিড় জমান পুজো মণ্ডপে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More posts