আসানসোলের ১৩ কেন্দ্রে প্রথম দিনের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে / বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে বাংলায় এসএসসি দিতে চাকরিপ্রার্থীরা………… আসানসোল,৭ সেপ্টেম্বরঃ

পাবলিক নিউজ ডেস্ক আসানসোল :- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো রবিবার গোটা বাংলার পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলে প্রথম দিনের এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হলো। এদিন আসানসোলের ১৩ টি কেন্দ্রে ৮ হাজার ১৯৭ জন পরীক্ষা দিয়েছেন। এদিন ছিলো নবম ও দশম শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষা।
এদিন অনেকে পরীক্ষার্থী ছিলেন যারা নতুন পরীক্ষা দিচ্ছেন। অনেকেই রয়েছেন, যারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ চাকরি হারিয়ে আবার এদিন পরীক্ষা দিচ্ছেন।
এদিন দেখা গেলো, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্য থেকে বাংলায় এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে চাকরিপ্রার্থীরা এসেছেন।
স্বাভাবিকভাবে যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানওতোর।
রবিবার সকাল থেকে আসানসোলের একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরিপ্রার্থীরা ভিড় জমান। সেখানেই দেখা মিললো ভিনরাজ্যের বাসিন্দা চাকরিপ্রার্থীদেরও। এদের কেউ এসেছেন উত্তরপ্রদেশের গান্ধীনগর বা আবার কেউ এসেছেন প্রয়াগরাজ থেকে। আবার কেউ ঝাড়খণ্ডের দেওঘর থেকে আসানসোলে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। এক মহিলা চাকরি প্রার্থীকে দেখা গেলো তার ৮ মাসের সন্তানকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে। সবারই লক্ষ্য সরকারি চাকরি পাওয়া। বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে আসা চাকরিপ্রার্থীদের কথায় , তাদের রাজ্যে চাকরি এখনো মেলেনি। বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর আস্থা রয়েছে তাদের। তাই এখানে পরীক্ষা দিতে আসা। ‘স্বচ্ছ’ নিয়োগ এখানে হবে। তাই চাকরি পেতে তাদের কোন সমস্যা হবে না বলেই আশা করেন তার।
উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, আমি প্রথম বার বাংলায় চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা। তাও আবার এসএসসির মতো পরীক্ষা দিতে । তার বিষয় হিন্দি। ওখানেও পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছ। তার মধ্যে এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছি। যেখানে সুযোগ পাবো, সেখানেই চাকরি করবো।
সন্দীপকুমার যাদব নামে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা আরো এক চাকরিপ্রার্থীর কথায়, আমাদের রাজ্যের চাকরির অবস্থা খুব খারাপ। কোন পরীক্ষাই বলতে গেলে হয় না। তাই চাকরি নেই। সেজন্যই তো বাংলায় এসেছি পরীক্ষা দিতে। ওখানে পেলে কি আর এখানে আসতাম? যোগীরাজ্যের বাসিন্দা আরো এক যুবক বলে বলেন, ২০২২ সালে টিজিটি বা ট্রেনড গ্র্যাজুয়েট টিচার পরীক্ষার আবেদন করেছিলাম। এখনও চাকরি পাইনি। উত্তরপ্রদেশে কোন চাকরি নেই। বাংলার সরকারের উপর ভরসা আছে। তাই এখানে এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসেছি। সন্তানকোলে বাংলায় পরীক্ষা দিতে আসা পূজা দেবীর বাংলার সরকারের উপর ভরসা রয়েছে। পরীক্ষা ঠিকমতো দিলে, চাকরি পাবেন বলেই আশা তার।
এদিন বিকেলে, আসানসোলের মহকুমাশাসক (সদর) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, আসানসোলের ১৩ টি কেন্দ্রেই এদিন নির্বিঘ্নে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কোথাও কোন সমস্যা হয়নি।
জানা গেছে, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর রবিবার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি নিয়োগ পরীক্ষা হবে আসানসোলের ৬ টি কেন্দ্রে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮৪৯ জন।


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক হেনস্তা ইস্যুতে দেশ জুড়ে শোরগোল পড়েছে। বিশেষ করে বিজেপি শাসিত সব রাজ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে। ঐসব বাঙালি শ্রমিকদের অনুপ্রবেশকারী সন্দেহ বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা হয়েছে। পরে, চাপে পড়ে অনেককে আবার ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গেরুয়া শিবিরের দাবি,ছিলো , বাংলায় কর্মসংস্থান নেই। তাই পেটের দায়ে ভিনরাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের যেতে হচ্ছে। অথচ এদিনের এসএসসির পরীক্ষা দিতে আসা ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীদের কথা অন্য তথ্য তুলে ধরছে বলেই দাবি বিভিন্ন মহলের। এই প্রসঙ্গে, এদিন নিজের সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স হ্যান্ডেলে বিরোধীদল বিশেষ করে বিজেপির উদ্দেশ্যে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পোস্ট করে বলেন, বাংলায় এসএসসির পরীক্ষা দিতে এদিন যোগীরাজ্য সহ ভিন রাজ্য থেকে ছেলেমেয়েরা এসেছেন। তারা ডবল ইঞ্জিন সরকার চলা রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের মধ্যে অনেকে বলছেন সেখানে চাকরি নেই। ঠিকমত পরীক্ষা হয় না। বারবার পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। ইত্যাদি। তারা এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। কিছু বুঝলেন? প্রসঙ্গত, এখানে কেউ বলেনি বাংলার চাকরির পরীক্ষা শুধু বঙ্গবাসী দিতে পারবে। কেউ হয়রান করেনি। অপমান করেনি। বাধা দেয়নি। কিছু বুঝলেন? জয় বাংলা।
এর পাল্টা গেরুয়া শিবিরের তরফে বলা হয়েছে, আগে তো নিয়োগ হোক। তখন দেখা যাবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More posts