পাবলিক নিউজঃ আসানসোল :– আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বারাবনি থানার ওসি বা অফিসার ইনচার্জ মনোরঞ্জন মণ্ডলকে সাসপেন্ড করা হলো। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বালি ও কয়লা নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়ার কয়েক ঘন্টার বৃহস্পতিবার রাতে তাকে সাসপেন্ড করলেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। সম্প্রতি মনোরঞ্জন মন্ডলকে বারাবনি থেকে অন্ডাল থানার ওসি করা হয়েছিলো। কিন্তু সেই দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত বা সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে নির্দেশ জারি করেছেন পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। এই ঘটনার পর আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ মহলে আলোড়ন শুরু হয়েছে। বেশ কিছু দিন আগে এই বারাবনি থানায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অসিত সিংয়ের জন্মদিন পালন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো। পরে বারাবনিতে কালীপুজোর উদ্বোধন করতে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওই বিষয়টি তুলে ধরে সরব হয়েছিলেন।
দিন কয়েক আগে দলের তরফে হওয়া এক বিক্ষোভ সভা থেকে বারাবনি থানা এলাকায় কয়লা ও বালির পাচার নিয়ে সরব হয়েছিলেন আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তবে, তার এই বক্তব্যের জন্য যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এমনটা মানতে চাননি বংশগোপাল চৌধুরী।
এদিকে, বারাবনি থানার ওসির সাসপেন্ড নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরীকে একযোগে আক্রমণ করেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। শুক্রবার তিনি বলেন, আসানসোল – দূর্গাপুরে কি হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে জানতে না? এই এলাকায় যেসব বেআইনি কাজ হয়, তার পেছনে রয়েছেন পুলিশ কমিশনার। এখন তিনি নিজে একজন ওসিকে সাসপেন্ড করছেন। সবার আগে উচিত তো তাকে সাসপেন্ড করা। তিনি আরো বলেন, অভয়া কান্ডে দেখেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিনীত গোয়েলকে বাঁচাতে কি করেছিলেন। আসল কথা হলো মুখ্যমন্ত্রী শেষ বেলায় এসে নিজের ইমেজ মেকওভার করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা হওয়ার নেই। তিনি যে দামী সাদা শাড়ি পড়েন, তাতে রক্তের সঙ্গে দূর্নীতির কালো দাগ লেগে গেছে।
তবে, বারাবনি থানার ওসির সাসপেন্ড হওয়া নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব। তাদের বক্তব্য, যা হয়েছে, তা একেবারে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রশাসন চালান। তাই কেউ যদি বেআইনি কিছু করেন, আইন মেনে তিনি শাস্তি পাবেন।
উল্লেখ্য, বারাবনি থানা এলাকার মধ্যে পড়ে বারাবনি বিধানসভা। এই বিধানসভার বিধায়ক হলেন বিধান উপাধ্যায়। তিনি একাধারে আবার আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পদেও আছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট বা এডিপিসির পুলিশ কমিশনারের সাক্ষর করা এক নির্দেশ জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, পিআরবি ভলিউম – ১, ১৮৪৩-এর বিধি নং ৮৮০/৮৮১ এবং ডব্লুবিএস আর পার্ট -১ , বিধি নং ৭১ অনুযায়ী এসআই (ইউবি) মনোরঞ্জন মন্ডল, ওসি বারাবনি পিএস, আসানসোল দুর্গাপুরপুলিশ কমিশনারেট ২১.১১.২০২৪ তারিখে সাসপেন্ড করা হল। কারণ তার চাকরি অব্যাহত রাখা জনসেবার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর তার চাকরিতে অপেশাদার আচরন এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য বিভাগীয় তদন্ত শুরু রয়েছে। সাময়িক সাসপেন্ড সময় তিনি তার মূল বেতনের অর্ধেক এবং সাময়িক বরখাস্তের অধীনে থাকা সরকারি কর্মচারীর জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাহ ভাতার পরিমাণে নির্বাহ ভাতা এবং মহার্ঘ ভাতা আকারে সাধারণ ভাতা পাবেন। তিনি তার পোশাক ও সরকারি জিনিস যা, তার কাছে আসো, তা রিজার্ভ পুলিশ ইন্সপেক্টর, এডিপিসির কাছে জমা দেবেন। তিনি আসানসোল পুলিশ লাইনে থাকবেন।
প্রসঙ্গতঃ, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গঠনের পরে এই প্রথম থানার ওসি পদমর্যাদার কোন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এত বড় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হল।
পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে আরো জানা গেছে, আরো এক ওসির বিরুদ্ধে এই ধরনের শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু শুরু হয়েছে। নজরে রয়েছেন আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার বলে জানা গেছে।