পশ্চিম বর্ধমান জেলা / কুলটিতে আবারও শাসক দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে / কাউন্সিলারের সঙ্গে বিবাদ, ওয়ার্ড সভাপতিকে মারধরের অভিযোগ ধৃত প্রাক্তন কাউন্সিলার

পাবলিক নিউজঃ অলোক চক্রবর্তী আসানসোল পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল পুরনিগমের কুলটিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরর গোষ্ঠী কোন্দল আবারও প্রকাশ্যে এলো। কুলটির ৬৫ নং তৃণমূলের ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট বা সভাপতি মহঃ জামির কুরেশিকে মারধর করার অভিযোগ উঠলো প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে। রবিবার হওয়া মারধরের মারধরের এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হয় নি। জামির কুরেশি তার উপর হামলার কথা জানিয়ে নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে প্রাক্তন কাউন্সিলার আখতার হোসেনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের পরেই নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ প্রাক্তন কাউন্সিলারকে আটক করে। রবিবার সারারাত তাকে ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখা হয়। পরে সোমবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও আরো দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নাম হলো মহঃ জামশের ও মহঃ তনবীর রাজা। সোমবার সকালে ধৃতদেরকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনা নিয়ে কুলটি পুর এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আবারও কুলটিতে দলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছে।
কুলটির ৬৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলার নাদিম আখতার ওরফে বাবলুর সঙ্গে প্রাক্তন কাউন্সিলর আখতার হোসেনের বিবাদ দীর্ঘদিনের। রবিবারের ঘটনা সেই বিবাদেরই ফল বলে ওয়ার্ডের মানুষ ও তৃনমুল কংগ্রেসের কর্মী এবং সমর্থকদের সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, রবিবার আসানসোলের কুলটির ৬৫ নং ওয়ার্ডের নিচুগ্রামে তৃণমূলের ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট মহঃ জমীর কুরেশির বাড়ির সামনে রান্না করার কিছু বাসন রাখা ছিল। সেইসব কিছু ওয়ার্ডের প্রাক্তন আখতার হেসেনের নির্দেশে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে। এইসব জিনিস রাখার জন্য প্রতিবাদ করায় তৃণমূলের ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট মহঃ জমীর কুরেশি। তিনি এলাকারই এক যুবককে ফোন করে ঐসব বাসন সরিয়ে নিতে বলেন। পাশাপাশি তিনি গোটা বিষয়টি বর্তমান কাউন্সিলার নাদিম আখতার ওরফে বাবলুকেও জানান। অভিযোগ এরপরই দলবল নিয়ে এসে প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর আখতার হোসেন ওয়ার্ড প্রেসিডেন্টকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এলাকাতেও বেশ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে কুলটি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। এই ঘটনায় প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর আখতার হোসেনকে আটক করে পুলিশ।
প্রাক্তন কাউন্সিলার তার বিরুদ্ধে উঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। ফাঁড়িতে বসে তিনি পাল্টা ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও দলের জেলা চেয়ারম্যান কুলটির প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের কারণে কুলটিতে তৃনমুল কংগ্রেসের হার হয়েছে। নিচু গ্রামে অঞ্জুমান ফ্রি প্রাইমারি স্কুল ভেঙে ভবন বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিলো। পুরনিগম তা বন্ধ করেছে। সেখানে প্রতি বছরের মতো খাজা বাবার একটা প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিলো। সেখানেই কিছু তারজন্য জিনিস ছিলো। ওয়ার্ড সভাপতি ও কাউন্সিলার সেগুলো সরিয়ে নিতে বলে। আমি তার প্রতিবাদ করি। এরপর পুলিশ এসে আমাকে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। পরে আমাকে গ্রেফতার করে বলা হয়েছে, আদালত থেকে জামিন নিতে। তার দাবি, এইসব যা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমি গোটা বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।
এদিকে প্রাক্তন কাউন্সিলারকে একযোগে আক্রমণ করেন বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড সভাপতি।
কাউন্সিলর বলেন, ওয়ার্ড সভাপতি আমাকে তার বাড়ির সামনে বাসন রাখা আছে বলে জানায়। সে আশঙ্কা করে যে, প্রাক্তন কাউন্সিলার ইচ্ছাকৃত ভাবে একটা গন্ডগোল করার চেষ্টা করছে। তারপরই তার উপর হামলা চালানো হয়। আমি কুলটি থানার আইসিকে বলি। তিনি পুলিশ পাঠিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন। তার দাবি, আমার সঙ্গে রাজনীতিতে উঠতে না পেরে প্রাক্তন কাউন্সিলার এইসব করছেন।
ওয়ার্ড সভাপতি বলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে এইসব করা হচ্ছে। আমাকে মারধরের অভিযোগ আমি থানায় লিখিত ভাবে করেছি।
জেলা চেয়ারম্যান এই প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব গোটা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আখতার হোসেন সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More posts