

পাবলিক নিউজঃ ডেস্ক পশ্চিম বর্ধমান:– গত ২৪ ঘন্টায় বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া দামোদর – বরাকর উপত্যকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেকটা কমলো। আর তাতে মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ প্রায় অর্ধেক করলো ডিভিআরআরসি বা দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেটরি কমিটি। তবে দুই জলাধারের বিপদসীমার মাত্র ৪ ফুট নিচে রয়েছে জলস্তর।
ডিভিআরআরসির তরফে জানা গেছে বুধবার সকালে সাতটা নাগাদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যার মধ্যে পাঞ্চেত থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ও মাইথন থেকে ৪০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এরপর সকাল এগারোটার সময় জল ছাড়ার পরিমাণ আরো কমানো হয় ডিভিআরআরসির তরফে। এই পর্যায়ে পাঞ্চেত থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার ও মাইথন থেকে ২০ হাজার কিউসেক অর্থাৎ সবমিলিয়ে দুই বাঁধ থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এদিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ ডিভিআরআরসির তরফে এক প্রেস বিঞ্জপ্তি জারি করে বলা হয় এই সময়ে জল ছাড়া পরিমাণ আগের থেকে আরো ১০ কমিয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক করা হয়েছে। পাঞ্চেত থেকে ১ লক্ষ ৫ হাজার ও মাইথন থেকে ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বলতে গেলে প্রায় সারাদিন ধরে এই দুই বাঁধ থেকে গড়ে ২ লক্ষ থেকে ২.৫০ লক্ষ কিউসেক ছাড়া হয়েছিল।


বুধবার জল ছাড়ার পরিমাণ অনেকটা কমানোর পরে পাঞ্চেত ও মাইথনের জলস্তর কিছুটা নেমেছে। তবে এখনো জল এই দুই জলাধারে বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে বলে ডিভিডি ও ডিভিআরআরসি সূত্রে এদিন জানা গেছে। এদিন দুপুরে মাইথনের জলস্তর ৪৯১.০৪ একর ফুটে আছে। মাইথনের সর্বোচ্চ জলধারণ ক্ষমতা হলো ৪৯৫ একর ফুট। মঙ্গলবার প্রায় সেখানে পৌঁছেছিলো জলস্তর। একইভাবে পাঞ্চেতের জলস্তর এদিন ৪২১.২৪ একর ফুটে আছে। পাঞ্চেতের জলধারণ ক্ষমতা হলো ৪২৫ একর ফুট। মঙ্গলবার প্রায় ৪২৫ একর ফুট ছুঁই ছুঁই ছিলো পাঞ্চেত জলাধারের জলস্তর।
বুধবার ডিভিআরআরসির সদস্য সচিব শশী রাকেশ বলেন, গত ১৪, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর দামোদর – বরাকর উপত্যকা এলাকায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। যা গত ১০/১৫ বছর এই এলাকায় হয়নি। আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ২৫ টা বৃষ্টি মাপার মেশিন বসানো আছে। তাতে দেখা হচ্ছে এই এলাকায় গড়ে প্রতিদিনই ৮০ থেকে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন জায়গায় তার পরিমাণ ৯০ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই পরিমাণ বৃষ্টি হলে আমরা কি করবো? আমাদের তো দুটি বাঁধকে বাঁচাতে হবে। এই মুহুর্তে দুটি বাঁধের জল বিপদসীমার মাত্র ৪ ফুট নিচে রয়েছে। তা আরো কিছুটা নামাতে হবে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই এলাকায় বৃষ্টি কমলেই জল ছাড়ার আস্তে আস্তে কমানো হবে।

প্রসঙ্গতঃ, বুধবার দুপুরে হাওড়ায় বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে বেরোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তিনি এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকে দায়ী করেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এটা ম্যান মেড বন্যা। এরজন্য দায়ী ডিভিসি। ২০০৯ সালের পরে এই পরিমাণ জল ডিভিসি ছাড়লো। জল না ছাড়তে বলা হয়েছিলো। কিন্তু ডিভিসি কথা শোনেনি। এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগ ও দাবি নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি ডিভিসির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ( সিভিল) আঞ্জনি কুমার দুবে। এদিন তিনি বলেন, ডিভিসি জলাধার থেকে জল ছাড়েনা। এর নির্দেশ দেয় ডিভিআরআরসি। সেই মতো জল ছাড়া হয়। আর এই ডিভিআরআরসিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ঝাড়খণ্ড সরকার, ভারত সরকার ও ডিভিসির আধিকারিকরা আছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আগাম জল ছাড়ার কথা জানানো হয়। তিনি বলেন, এবার এই এলাকায় রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। তাই জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো যেমন হয়ে থাকে। তেমন কমানোও হয়।

Leave a Reply