

পাবলিক নিউজ আলোক চক্রবর্তী আসানসোল বাড়িতে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হওয়া এক রোগীর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা নিয়ে শনিবার উত্তেজনা ছড়ালো আসানসোলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ৫০ উর্ধ্বের মৃত রোগীর নাম মহঃ ওবায়েদ আলম। আসানসোল উত্তর থানর পুলিশ খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে ঘন্টা কয়েকের চেষ্টায় পরিস্থিতি সামাল দেয়।
জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ আসানসোলের ইসমাইল এলাকার বাসিন্দা মহঃ ওবায়েদ আলম ঘরে পড়ে মাথায় আঘাত পান। যে কারণে তাকে আসানসোলের সেনরেল রোডের সৃষ্টিনগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শনিবার সকালে তিনি মারা যান।
ঘটনা সম্পর্কে মৃত ব্যাক্তির ছেলে মহঃ শাদাব আলম বলেন, গত ২৬ মার্চ আমার বাবা মাথায় আঘাতের কারণে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিন সকালে হাসপাতাল থেকে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে ফোন আসে। সেই খবর পেয়ে আমি পরিবারের সাথে হাসপাতালে পৌঁছাই৷ তখন হাসপাতাল থেকে আমাকে জানানো হয় যে তার বাবার দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। মহঃ শাদাব আলম আরো বলেন, আমি, আমার ভাই বা পরিবারের কোনও সদস্যের তার বাবার মৃত্যু সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। তাই তারা চান না যে তার বাবার ময়নাতদন্ত করা হোক। কিন্তু হাসপাতাল ময়নাতদন্ত করানোর ব্যাপারে অনড় রয়েছে । তিনি বলেন, যখন আমার পরিবারের কোনও আপত্তি নেই, তাহলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ কেন ময়নাতদন্তের উপর অনড় থাকবে ? তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা চান না বাবার মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হোক। হাসপাতালের চাপে জোর করে বাবার মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করতে দেবো না।
এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাঃ অরিত্র ভট্টাচার্য বলেন, ২৬ মার্চ মহঃ ওয়াবেদ আলমকে মাথায় আঘাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কারণ তার বাইরের দিকে আঘাত ছিলো। তাই নিয়ম অনুসারে, আমি কন্যাপুর ফাঁড়ির পুলিশকে এই বিষয়ে অবহিত করেছিলাম। তিনি আরো বলেন, এখানে মহঃ ওয়াবেদ আলমের চিকিৎসা করা হয়। তার অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিলো। কিন্তু, এদিন তিনি মারা যান। এটি একটি মেডিকেল ক্ষেত্রে আইনগত মামলা। তাই সরকারি নিয়ম অনুসারে ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম প্রয়োজনীয়।
পরে ঘটনার খবর পেয়ে ও মৃত পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে, আসানসোলের সমাজকর্মী ফিরোজ খান এফকে হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে চান কেন তারা ময়নাতদন্ত করতে চান। হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও পুলিশ তাকে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করার আইনগত দিকটি বলে। এরপর তিনি বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে পরিবারকে বলেন।
ফিরোজ খান এফকে বলেন, আমি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে আসি। তখন জানতে পারি, গত ২৬ মার্চ মহঃ ওবায়েদ আলমকে মাথায় আঘাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। এদিন তিনি মারা গেছেন। হাসপাতাল থেকে তার ছেলেদেরকে ফোনে এই বিষয়টি জানানো হয়। তার ছেলেরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে হাসপাতালে পৌঁছান। অন্যদিকে, মহঃ ওবায়েদ আলমকে দাফনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, তবে হেলথ ওয়ার্ল্ড হাসপাতাল বলছে যে তার ময়নাতদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, দেশের আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। মহঃ ওবায়েদ আলমের পরিবারও নয়। এই হাসপাতালও নয়। ফিরোজ খান এফকে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে মহঃ ওবায়েদ আলমের মৃত্যুর কারণ তার পরিবারকে না দেওয়া পর্যন্ত তারা ময়নাতদন্তের অনুমতি দেবেন না। রোগী সকালে মারা গেছেন। সেই ঘটনার পরে ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গেছে। এই রকম একটা বড় হাসপাতালের রোগীর মৃত্যুর ডিটেইলস দিতে ৪ ঘন্টা সময় লাগছে। এটা খুবই অবাক করার মতো ব্যাপার। তিনি বলেন, এই প্রথমবার নয় যে এই হাসপাতালে রোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানির অভিযোগ আনা হচ্ছে। যখনই এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কোনও রোগী এখানে ভর্তি হতে চান, তখনই হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাকে ভর্তি করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে । তার দাবি, একটি হাসপাতাল তার ব্যবস্থাপনার মধ্যে যদি রোগীদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো আচরণ করতে না পারে ও তাদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে না পারে, তাহলে এমন হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
যদিও, হাসপাতালের তরফে এই ঘটনা নিয়ে বলা হয়েছে, কোন রোগীর পড়ে গিয়ে মৃত্যু হলে, সেটিকে দুর্ঘটনা বলে ধরে নেওয়া হয়। তা আনন্যাচারাল বা অস্বাভাবিক। আইন মেনে স্থানীয় থানাকে তা লিখিত ভাবে জানানো হয়। এই ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে। বাকিটা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ ও মৃত রোগীর পরিবারের সদস্যদেরকে মৃত্যু সংক্রান্ত যা নথি দেওয়ার তা দেওয়া হয়েছে। আর, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অভিযোগ নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষের দাবি, সরকারি গাইড লাইনে যা বলা আছে, তা করা হয়ে থাকে। তার বাইরে কোন রোগীর ক্ষেত্রে কোনকিছু করা হয় না।
এদিকে, আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ জানায়, হাসপাতাল কতৃপক্ষের তরফে এদিন সকালে ঐ রোগীর মৃত্যুর কথা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিলো। রোগীর পরিবারের সদস্যদেরকে বুঝিয়ে এদিন দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। পরিবার জানিয়েছে, ঐ ব্যক্তি বাড়িতে পড়ে গিয়ে গত চারদিন আগে আঘাত পান। এই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছিলো। শনিবার সকালে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।










Leave a Reply