সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার দের সিদ্ধান্তকে সমর্থন মীনাক্ষীর

পাবলিক নিউজঃ ডেস্ক কাঁকসা:-আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরুণী ডাক্তারি পড়ুয়ার উপর নৃশংস ও পাশবিক অত্যাচার এবং পরিকল্পিত খুন সহ রাজ্য জুড়ে ঘটে চলা মহিলাদের উপর পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও অপরাধীদের আড়াল না করে কঠোর শাস্তির দাবিতে এবং জল জমি ও জঙ্গলের লুট রুখতে মঙ্গলবার কাঁকসার ১১ মাইলে বিভিন্ন বাম সংগঠনের পক্ষ থেকে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার বাম নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন বাম সংগঠনের কর্মী সমর্থকেরা। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বাম যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জী।

এদিন মিনাক্ষি মুখার্জি কাঁকসার ১১ মাইলে জনসভা থেকে কাঁকসার মানুষকে আরজি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামার আবেদন করেন। সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন উৎসবে যোগ দিতে। সবাই উৎসবে যোগ দেবে ঠিকই, তবে এবার দুর্গা পুজোয় যারা গাড়ি করে ঘুরতে বের হন, তারা সেই চিন্তাভাবনা বাদ দেবেন। যে টাকায় পুজোর সময় বাড়ির রং করা হয় সেই টাকা খরচ করবেন না। যে টাকায় নতুন পোশাক কেনা হয় সেই টাকায় পোশাক কম কিনে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে বাড়ির দেওয়ালে ব্যানার পোস্টার লাগিয়ে জাস্টিস ফর আরজিকর লিখবেন। এছাড়াও পূজোর সময় বাড়িতে লক্ষীর পায়ের আলপনা দেওয়ার সময় তার নিচে লিখবেন জাস্টিস ফর আরজি কর। তিনি বলেন যতদিন না দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে ততদিন তারা আন্দোলন থেকে কিছু হটবেন না। এদিন পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন যদি নিজেদের শিরদাঁড়া গুলো সোজা থাকে তাহলে লড়াই করে যান। দেখবেন আপনাদের লড়াইয়ের পাশে বাম কর্মী সমর্থকরা রয়েছে। বামেরাই পুলিশ কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে।কারণ পুলিশের মধ্যে দুটি ভাগ আছে।একটি ভাগ জুতো খুলে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে খিচুড়ি পরিবেশন করেন।একটা ভাগ তাদের আন্দোলনকে সমর্থন করেন।শিরদাঁড়া সোজা রেখে।তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বামেরা নেবে।

তৃণমূলের সরকারে রেশনে চাল পাওয়া যায় না,ঘর ভেঙে গেলে ঘর পাওয়া যাচ্ছে না, হাসপাতালে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। গোটা রাজ্য জুড়ে লুট সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আবার হাসপাতালে ঢুকেও খুন করছে। এরপর আর মাথা নোয়ানো যায় না। এদিন তিনি এগারো মাইলের মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন পাশের বাড়ির মানুষের রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে তাদের সকলকে রাস্তায় নামার জন্য আবেদন করতে বলেন। তিনি বলেন পাশের বাড়ির লোককে গিয়ে যাতে বলা হয়।রাস্তায় এসে দাঁড়ান রাস্তাই আপনাকে বিচার পাইয়ে দেবে। ভয়কে জয় করে রাস্তায় যদি না দাঁড়াতে পারে, আর ওদের চোখ রাঙানি কে উপেক্ষা করে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে, তবে হাসপাতালে ঢুকে যেভাবে একজনকে ধর্ষণ করে খুন করেছে আগামী দিনে আরজি করের মত বাড়ি ঢুকেও একই কাজ করতে পারে তারা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সকলকে উৎসবে ফেরার জন্য।কিন্তু তারা বলেছেন লাশের উপর দিয়ে একমাত্র চিল সকুন উৎসব করতে পারে। মানুষ কখনো লাশের উপর দিয়ে উৎসব করতে পারেনা। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন বর্তমানে হাসপাতালে দুর্নীতি করার জন্য নতুন এক কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি হল রোগী কল্যাণ সমিতি। রোগীদের কাছ থেকে পয়সা খাওয়ার জন্য, হাসপাতালের ভেতরে দুর্নীতি করার জন্য, দুর্নীতি নিয়ে কেউ কথা বললে তাকে ধর্ষণ করে খুন করে দেওয়ার জন্য, এই রোগী কল্যাণ সমিতি সরকারি হাসপাতালে গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে কোনরকম চিকিৎসা পরিষেবা মেলে না। তাদের কোন বাম কর্মী অসুস্থ হলে বা আহত হলে তাদেরকে স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে এই স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে।
তরুণ যুব সম্প্রদায়ের কাছে হাত জোড় করে তিনি আবেদন করেন রাজ্যটা অন্ধকারে চলে যেতে বসেছে। মশাল হাতে নিয়ে রাস্তার দখল নিন। আর যে যত বড়ই নেতা কর্মী হোক, সে যদি আপনাদের পাশে না এসে দাঁড়ায়। তাহলে তাকেও রাস্তা দেখিয়ে দিন। আর যদি কোনো শাসক দলের নেতা তাদের এই আন্দোলন করা নিয়ে কোনরকম পরে বাড়ি ফিরলে দেখে নেওয়ার ধুমকি দেয়। সেই শাসক দলের নেতা কর্মীদের জানিয়ে দিন। দেখার দিন শেষ। কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না।
সিবিআইয়ের তদন্তর বিষয় নিয়ে তিনি বলেন শুধু বামেরা নয় রাজ্য এবং দেশজুড়ে আরজিকরের ঘটনায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের সমস্ত মানুষের রাগ, ক্ষোভ, আবেগ, যন্ত্রণার সাথে সঠিক বিচার করেনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গোটা রাজ্যের প্রতিবাদী আন্দোলনকে অমানবিক ভাবে অপমান করেছেন উৎসবে ফেরার কথা বলে। গোটা রাজ্যের মানুষ সিস্টেমের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে। রাজ্যের মানুষ প্রশাসনকে একমাস সুযোগ দিয়েছিল এবার রাজ্যের মানুষ সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মত মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ তারা না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুনিয়ার ডাক্তারদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্য যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি ও বাম যুব সংগঠন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More posts