
পাবলিক নিউজ ডেস্ক আসানসোল :– রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে সূর্য উপাসনা। হিন্দুদের অন্যতম আরো একটি বড় উৎসব ছটপুজো। ইতিমধ্যেই আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে শুরু হয়েছে সেই পুজোর প্রস্তুতি। দুই শিল্পাঞ্চলের নদী ও পুকুরে এই পুজোর জন্য ঘাট তৈরি করা হয়েছে।
আসানসোলের বার্নপুর, রানিগঞ্জ, কুলটিতে দামোদর নদীর তীরে ছটপুজোর ঘাট তৈরি করা হয়েছে। জামুড়িয়া ও বারাবনিতে অজয় নদীতে পুজোর ঘাট তৈরি হয়েছে।
সোমবার বিকেলে এবং মঙ্গলবার ভোরে দুই শহরের বিভিন্ন ঘাটে পুজো দেবেন ছট ব্রতীরা। রবিবার সকাল থেকে আসানসোলের জিটি রোডের বড়বাজার সহ সব বাজারে পুজোর সামগ্রী কেনার ভিড়। একই অবস্থা বার্নপুর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া সহ অন্যান্য জায়গার বাজারে। ভিড়ের জন্য এদিন দুপুরের পরে আসানসোল শহরের জিটি রোডে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বড় বাস ও গাড়ি জিটি রোডে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এইসব বাস ও গাড়ি ১৯ নং জাতীয় সড়ক দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এরফলে সমস্যায় পড়েন বাসযাত্রীরা।
একই ছবি দুর্গাপুরেও। বেনাচিতি মার্কেট ও বিভিন্ন বাজারে ফলের দোকানে উপচে পড়েছে ভিড়। কলা, নারকেল, আখ, লাউ, ফল ও পুজোর সামগ্রী কেনার হিড়িকে পা ফেলার জায়গা নেই বাজারে।
দুর্গাপুরের কুমার মঙ্গলম পার্ক, মোহিষ্কাপুর , বেনাচিতি , মামড়া ও রাজবাঁধ এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোর বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছট ঘাটগুলিতে চলছে আলোসজ্জা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। শহর জুড়ে দুর্গাপূজো, কালিপুজো, ভাইফোঁটার পরে আরো একটি উৎসবের আবহ। বাজারে খুশির রোশনাই।
এই ছট পুজো হলো সূর্যদেব ও তাঁর স্ত্রী উষাদেবীর আরাধনা। এই পুজো মূলতঃ বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষের অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি সূর্যোপাসনা, জল, প্রকৃতি ও মানবজীবনের মধ্যেকার সামঞ্জস্যের এক অনন্য প্রকাশ। “ছট” শব্দের অর্থই হল ষষ্ঠী । কার্তিক মাসের শুক্ল ষষ্ঠী তিথিতেই এই পুজো পালিত হয়।
এই পুজোর তাৎপর্য হলো ব্রতপালন। বিশ্বাস করা হয়, সূর্যদেবই জীবনের শক্তি, আলো ও সুস্বাস্থ্যের দাতা। তাই ছট ব্রতীরা নির্জলা উপবাস করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় অর্ঘ্য নিবেদন করেন। এই উপাসনায় কোনো মূর্তি বা প্রতিমা থাকে না। তবে, এখন অনেক জায়গায় মূর্তি বসিয়ে পুজো করা হচ্ছে। সবকিছুর মধ্যে, যা থাকে, তা হলো প্রাকৃতিক উপাদান নদীর বা জলাশয়ের জল, সূর্যের আলো ও ফল। পুজো চলাকালীন চার দিন ধরে ব্রতীরা শুদ্ধতা, সংযম ও নিষ্ঠার সঙ্গে নানা আচার পালন করেন। সেগুলো হলো ‘নহাই খাই’, ‘খরনা’, ‘সন্ধ্যা অর্ঘ্য’ ও ‘উষা অর্ঘ্য’।
ছটপুজো হলো আত্মসংযম, কৃতজ্ঞতা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধার এক প্রতীক। সূর্যোদয়ের প্রথম আলোকরেখায় মিশে যায় মানুষের আশা, প্রার্থনা ও অদম্য বিশ্বাস।









Leave a Reply